Sunday, December 18, 2011

প্রান্তিক জীবনে

শিরশিরে বাতাস আর হলুদ পাতা

এখনও ঢেউ তোলে

স্মৃতির শৈশবে


বালিহাঁস বলাকার বৈকালিক উড়াল

ডানাজুড়ে কমলার মিশালি

মোহনার ঝুরোধানে বাবুইয়ের আসরে

কুবোদের কুব কুব


ফলেফুলে খিড়কি বাগান

রূপকথার জোড়াপাখি

স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে এখনও ছুঁয়ে যায়

নুয়েপড়া বাঁশের ডগা


প্রান্তিক জ়ীবনে

দখিনের জানালা গলে চিলতে আকাশ

বিস্তারিত হতে হতে

দিগন্তপারে খুঁজে পায়

একটা ছেঁড়া কাগজের নৌকা

Thursday, December 8, 2011

ক্রমশঃ

আবারও একটি দিনের অবসানের প্রতীক্ষা

আর অজানা সেই শূণ্যের পথে

আমার ক্রমশঃ পরিক্রমা


সেপথের পাশে নেই বুনোঝোপ

শৈশবের হারানো পুটুস

ভাঙাচোরা মাটির বাড়ি

নদীর ঘাটে যাবার মেঠোপথ

শীতের বিকালে বালিচরে কয়েকটা বক

সন্ধানে যাদের

দাঁড়কোণা ... নীলশামুক


দিগন্তের ওপারে তখনও সূর্য কমলা

কারা ওই নেমে এল বকচরে

হাতে কোদাল কাঁধে শব

অন্ধকার গায়ে মেখে ফিরে গেল


অক্ষরেখায় শেষ হয় আর একটি পাক

শ্রান্ত মহাকাল তুলে রাখে

ভুল হিসাবের খাতা

Saturday, November 12, 2011

জীয়নকাঠি

ধুলোওড়া আকাশে মেঘ জমলে চেয়ে দেখে

তেপান্তরের মাঠ

জেগে ওঠে ধ্রুপদী রূপকথার

ক্লান্ত হীরামণ


অকালযাত্রায় বিস্মিত হয়

ব্যাংগমীদের স্বপ্নতরু

পক্ষীরাজের দানার ঝাপটে সরে যায়

অলীক যাদুজাল

প্রান্তরের খরাবুকে ঝরে পড়ে

নীল মায়াবৃষ্টি

ক্যাকটাসের কাঁটায় কাঁটায় সুগন্ধিত

হলুদ সাদা ফুল


চিরন্তন এই মিথ....


রাক্ষসপুরীতে একটাই মানুষ

অনন্তকাল ধরে খুজে বেড়ায় তার স্বপ্নময়ী

ঘুমন্ত রাজকন্যা

তারই মাঝে যে লুকানো আছে

জেগেওঠার জীয়নকাঠি

Thursday, August 4, 2011

আনবাড়ি

আগুনরোদ তো মেখেছি অনেক

চোখ তুলে তবু দেখিনি কখনও

ভেসে বেড়ায় কার সে ছায়া

সাদা চিল না রঙ্গিন ঘুড়ি

হয়ত কোন কালো মেঘ

কেনই বা তার আকাশ ছোঁয়ার এমন নেশা


পাড়মোড়া ভাঁজে মন

স্বপ্ন-সত্যি আশা-নিরাশার সীমানা যেখানে ব্রাত্য

উত্তরহীন প্রশ্নের প্রতিধ্বনি পিছলে বেড়ায়

সাজানো বাড়ির চকচকে ঘষাকাঁচে

কার্নিসের আড়ালে বাস্তুপাখিটি ডেকে চলে

আনমনে...

কেউ সাড়া দিক বা না দিক

বিরহে...আবহে...

তার একলা সরগম


শেষ শ্রাবনের বৃষ্টিহীন রাজপথ

নিরালা দুপুরে সেই নুপুরের শব্দ

ঘুমভাঙ্গা চোখে আনে অবসাদ

শতাব্দীর বুক চিরে

প্রান্তিক শহরের কিনারায় জেগে থাকে আনবাড়ি

Monday, July 18, 2011

খনন

অনেকদিন হল এখানে বসবাস

আলো বাতাসের ভাগাভাগি

একবার ঘুরে এলে হয়না বাঁশবন পুকুরপাড়

অনেকটা আকাশ দিগন্তের মাঠ

বর্ষায় মাটিও বেশ নরম

খুঁড়ে তুলতে কষ্ট হবেনা চাপাপড়া গল্প


ভিজতে ভিজতে দরমার বেড়া ঠেলে বসে যাব

কোন মাটির বাড়ির দাওয়ায়

পাশেই পোষা কুকুরটা কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে

খবর পেয়ে পচা হরি দুখী হাজির হবে

মনের আঁধার থেকে তুলে আনব

ভাঙ্গা শালতি সঙসাজার শণনুড়ি

চড়ুইভাতির ফুটো হাঁড়ি...


নিজেদের আড়াল করে

সুখী সাজার খেলাটা তো ভালই শিখে গেছি

একবার নাহয় ভুল করেই চলো

বালিতে বাঁধাঘরের নিপাট সংসারে

ভোরে ঘুম ভেঙ্গে দৌড়ে যাব ঘাটে

সূর্যটাকে জলে ফেলে ধুয়ে নেব মুখ

ঝকঝকে দিনটাকে ফিরে পাই যদি





Monday, June 20, 2011

বিস্ত্রৃত অপেক্ষার ছায়া

ছাইরঙা বিকেলটা ঝুপ করে ফাঁকামাঠে নেমে এলেই

শীতবেলার অবসান

কুয়াশায় মুখ ঢেকে হিমজোসনা খুঁজে বেড়ায়

নীলশামুকের দিন

বিস্তৃত অপেক্ষার ছায়া ফেলে যায়

অপূর্ণ স্বপ্নচর


শ্রাবনে ঋতুমতী হয়নি যে নদী

জমে ওঠে তারই বাঁকাদহের কাহিনী

পাতার আগুন ঘিরে হারানো ইতিকথা


নদীনাম তার মুছে গেছে বহুদিন

রয়ে গেছে বালিচর

ছড়ানো ছিটানো কয়েকটা বাবলার জন্মভূমি

তবুও বিকেলের নিভু নিভু রোদ ওখানেই ছাইরঙ হয়

অপূর্ব স্বপ্নের মায়ায়


কিসের মায়াজাল জানেনা সে নদী

শুধু সমুদ্রসন্ধানে মুঠো মুঠো বালি

বুকে ধরে রাখে

Friday, June 17, 2011

অপেক্ষমান

ঠা ঠা দুপুরে একপায়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষমান রোদ্দুর

বাতাসে ভাসে--

তুলোয় জড়ানো ফাটা শিমূলের বীজ

উপেক্ষিত আশা খুঁজে বেড়ায়

সূচনার ভূমিকা

নৈশব্দের ধারাপাতে স্তব্ধ যখন শব্দের অরণ্য

শতাব্দীর নিভৃত বাসনা

নীলখামের আগল খুলে

ছড়িয়ে পড়ে ইতস্ততঃ

বিস্মৃত ইতিহাসের পথ ধরে ফিরে আসে

জংগলের অতীত

জুম চাষে মত্ত হ্য় যাযাবর জীবন

তথাপি সেই বটের মূল পাখির পায়ের ছাপ

ধরে রাখে অপেক্ষার অধ্যায়

এখনও যেখানে একলা দুপুর ঠা ঠা রোদ্দুর

শিমূলবীজের জন্মান্তর

নাবিক


কত নক্ষত্রযুগ পার হয়ে এসে এখনও তুমি জানলে না

তোমাকে ভালবাসাটা নেহাতই একটা ভান

আমি তৃপ্ত নই এক সমুদ্রে

তাই ভারত-প্রশান্ত-অতলান্তিকে আমার নিত্য আনাগোনা


প্রতিটি শুক্লপক্ষের সন্ধ্যায়

আমি ফালা ফালা করে কাটি

এক একটি কিশোরী চাঁদ

স্খলিত পায়ে বাথরুমের দরজায় আগল দিয়ে

অট্টহাসিতে মেতে উঠি


চাঁদহীন রাতকে আমার ফ্যাকাসে মনে হয়

তবুও চাঁদের উপমা খুঁজি না

তারাদের ঘৃণা করি


নগন্য এক বন্দরের নাবিক

জোনাকির আলোতেই ডুবে থাকি

তুমি ধ্রুবতারা হতে চেও না